Monday, January 9, 2017

নারীর কাছে পর্দা কি, এর প্রয়োজনীয়তা এবং পর্দা না করার শাস্তি ও কুফল

নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’ বলা হয়। আওরত শব্দের অর্থ – গুপ্ত বা আবৃত। সুতরাং নারীর নামেই বুঝা যায় – নারীর জন্য পর্দা আবশ্যকীয়। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই। তেমনি শরীয়তে নারীর জন্য পর্দাকে ফরজ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে পর্দার নির্দেশ

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : “(হে নারীগণ!) তোমরা তোমাদের ঘরের (বাড়ীর চতুর্সীমানার) ভিতর অবস্থান কর এবং বাইরে বের হয়োনা – যেমন ইসলামপূর্ব জাহিলী যুগের মেয়েরা বের হত।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৪৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন : “(হে নবী!) আপনি আপনার পত্মীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, যখন কোন প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (যেন পর্দার ফরজ লংঘন না করে। এমনকি চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে আবৃত করে রাখে।) ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৬০)

রাসূলুল্লাহ(সা.) ইরশাদ করেন – “যে সতর দেখবে এবং যে দেখাবে, তাদের উপর আল্লাহ লা‘নত করেন।” (বাইহাকী)রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “স্ত্রীজাতিরপর্দায় গুপ্ত থাকার সত্তা। কিন্তু যখনই তারা পর্দার বাহিরে আসে, তখন শয়তান তাদেরদিকে ঝুঁকে।” (তিরমিযী)রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “খবরদার!কোন পুরুষ যেন কোন মেয়েলোকের সাথে একাকী না থাকে। কেননা, যখনই কোন পুরুষ কোন মেয়েলোকেরসাথে একাকী হয়, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয়জন হয়ে যায় এবং তাদের পিছনে লাগে।” (তিরমিযী)নবীজী (সা.) আরো ইরশাদ করেন – “মেয়েরাযখন বালিগা হয়ে যায়, তখন তাদের শরীরের কোন অংশ দেখা বা দেখানো জায়িয নয়। অনেক কাপড়পরিধানকারিণী (পাতলা কাপড়ের কারণে) কিয়ামতের দিন উলংগ সাব্যস্ত হবে।” (মুসলিম)

১) রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামীহবে: -যারা গরুর লেজ সদৃশ বেতদ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়েশরীরের অংশ দেখা যায় এবং উটের কুঁজের মতন কেশ বিন্যাস করবে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণওপাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।'' [সহীহ মুসলিম হাদিস নং: ২১২৭,মুসনাদে আহমাদ,হাদীস:৮৬৬৫] 

২) রাসুল [সা.] বলেছেন,তিন শ্রেণীর মানুষের উপর জান্নাত হারাম অর্থাৎ এই তিন শ্রেণীর মানুষ কখনোই জান্নাতেপ্রবেশ করতে পারবে না।প্রথম শ্রেণী হলো- যারাকোনো প্রকার নেশাদারদ্রব্য পান বা গ্রহণ করে।দ্বিতীয় শ্রেণী হলো- যেবা যারা পিতা-মাতারঅবাধ্য, এই শ্রেণীভূক্ত মানুষরাওজান্নাতে যাবে না। তৃতীয় শ্রেণীহলো-দাইউস। ঐ দাইউস ব্যক্তি যে তার পরিবারে পর্দা প্রথা চালু রাখেনি। পরিবারের সদ্যসেরমাঝে বেপর্দা ছিলো, বেহায়াপনা ছিলো কিন্তু সে বাধা প্রদান করেনি। পরিবারের কর্তা হিসেবেবেপর্দা-বেহায়াপনা বন্ধ না করার জন্য এই শাস্তি পাবে সে।[মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯]

৩) আর সুগন্ধি আকর্ষণেরএমন একটি মাধ্যম যা দৃষ্টি-অবনত ব্যাক্তিকেও আকৃষ্ট করে। সুতরাং এ বিষয়ে কতটা সতর্কথাকা দরকার তা নিজেরাই ভেবে দেখি। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘‘প্রত্যেক চোখ যিনা করে। আর কোন নারী যদি সুগন্ধিব্যবহার করে কোন মজলিশের পাশ দিয়ে যায় তাহলে  সেও নযরের যিনা বা সরাসরি যিনারপ্রতি প্রলব্ধুকারী হিসেবে গণ্য হবে।(জামেতিরমিযী, হাদীস:২৭৮৬)

৪) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন-“কোনোপুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে নিঃসন্দেহে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।(অর্থাৎতখন শয়তান তাদের মনে কুমন্ত্রণা দেয়)।”(জামে তিরমিযী,হাদীস :১১৭১)

৫) রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন,খবরদার তোমার বেগানা স্ত্রীলোকের ঘরে প্রবেশ করো না। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেন ইয়ারাসুলুল্লাহ(সঃ) স্বামীর ভাইদের(ভাসুর, দেবর, বেয়াই ইত্যাদি) সম্পর্কে কি নির্দেশ?রাসুল(সঃ) ইরশাদ করেন তারা তো স্ত্রীর জন্য মৃত্যুতুল্য। অর্থাৎ মহাবিপদতুল্য। (তিরমিজিঃ১/২২০)

৬) উম্মুল মুমিনীন উম্মেসালামা(রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা(রাঃ) রাসুল(সঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমনসময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম(রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরাতার থেকে পর্দা করো, আড়ালে চলে যাও। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি তো অন্ধ। তিনিতো আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না। তখন রাসুল(স) বললেন তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতেপাচ্ছো না? (আবু দাউদ ২/৫৬৮)

৭) রাসুল(সঃ) বলেন নারীহল গোপনীয় সত্ত্বা।যখন সে ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি উচু করে তাকাতেথাকে। (তিরমিযি১/২২২)

৮) রাসুল(সঃ) বলেন , আমারপরে নারী ফিতনা(পরীক্ষা) পুরুষদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করবে। (বুখারি ও মুসলিম) 

৯) ভ্রু প্লাক করা ও পরচুলাপরা হারাম !! বর্তমান সময়ের ফ্যাশনসচেতন বোনেরা অনেকেই ভ্রু প্লাক করে থাকেন এবং নানা রঙের নানা ধরনের পরচুলাও ব্যাবহারকরে থাকেন। অথচ যারা এমন করেন, রাসুল (সাঃ) তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন। কাজেই বোনেরাআল্লাহর ভয়ে এই ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকুন।

●আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সবনারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়, এবং সেসব উপর, যারাভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে, যারা সৌন্দর্য মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারাআল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।' জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তার (ইবনে মাসউদের) প্রতিবাদকরলে তিনি বলেন, 'আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অভিসম্পাতকরেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, "রাসুল যে বিধান তোমাদেরকেদিয়েছেন তা গ্রহন কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশরঃ৭)"

●ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যে মহিলা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যেপরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও উল্কি উৎকীর্ণকরতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন।[সহীহ বুখারির ৫৫০৭ থেকে৫৫২৪ নং হাদিস দেখুন]

১০) রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “নারীরাহচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতেপারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।” [ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকেসহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮] এবং তিনি (সাঃ) নারীদের মসজিদে সালাত আদায়েরব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন, “তাদেরগৃহই তাদের জন্য উত্তম।”[আবু দাউদ ৫৬৭]

১১) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “আমি পুরুষের জন্য নারীরচেয়ে বড় আর কোন ফিতনাহ রেখে যাচ্ছিনা। আর, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিতনাহই ছিলো নারীসংক্রান্ত। সুতরাং লোকদের উচিত তাদের পরিবারকে ফিতনাহ এবং ফিতনাহর উপকরণ থেকে দুরেরাখা। [ফতোয়ায়ে আল-মার'আহ আল মুসলিমাহ : ২/৯৮১]
১২) আবু হুরায়ররা (রাদিআল্লাহুআনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "মহানআল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী একদিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।’’[সহীহ বুখারীঃ হাদীস ১০৮৮,সহীহ মুসলিমঃ ১৩৩৯, জামে তিরমিযীঃ হাদীস ১০৭০, সুনানে আবু দাউদঃ হাদীস ১৭২৩, ইবনে মাজাহঃহাদীস ২৮৯৯, মুসনাদে আহমদঃ হাদীস ৭১৮১, ৭৩৬৬, ৮২৮৪, ৮৩৫৯, ৯১৮৫, ৯৩৭৪, ৯৮৪৮, ১০০২৯,১০১৯৭, মুওয়াত্তা মালিকঃ হাদীস ১৮৩৩]

ফিক্বাহবিদদের সর্বসম্মতঐকমত্য এই যে, যে কোন যুগে, টেকনোলজির পরম উত্কর্ষতার সময়েও এই দুরত্ব ৪৮ মাইল/৮০বা ৮৩ কিলোমিটার। এই একই দুরত্ব অতিক্রম করার পরে একজন মুসাফির হিসেবে গন্য হবেন।

No comments:

Post a Comment